Pages

বউকে CNG করে দিতে গিয়ে হাতিরপুলে চালকদের দ্বারা দূর্ভোগের শিকার!

একটি প্রতিবাদের গল্প (চূড়ান্ত আপডেট):
গত ২২ তারিখ বৃহস্পতিবার বউকে সিএনজি করে দিতে গিয়ে হাতিরপুল এলাকায় চালকদের দ্বারা দূর্ভোগের শিকার হয়েছিলাম। ঝগড়া-বিবাদে না জড়িয়ে, ঘরে ফিরে বিআরটিএ পরিচালক বরাবর একটা অভিযোগ করেছিলাম।

প্রতিবাদের সেই ঘটনা ফেসবুকের কল্যানে ভাইরাল হয়েছে ইতোমধ্যে। ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা সিএনজিকেন্দ্রীক দুর্বিত্তায়নের বিরুদ্ধে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠাকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন মানুষ মন্তব্য করেছিলেন। এরমধ্যে কিছু কিছু মানুষ বলেছিলেন, ‘এসব করে কোন লাভ নেই। এদের কিচ্ছু হবে না।’ এমন ভাবে তারা এই ঘটনার পরবর্তী আপডেট জানতে চাইছিলেন যেন আমি প্রতিবাদ করেই হাস্যকর কোন কাজ করেছি এবং তারা নিশ্চিত যে আমি পরবর্তীতে সুখকর কোন আপডেট তাদের দিতে পারবো না! ওই মানুষগুলোর কনফিডেন্স দেখে আমিও মনে মনে বিভ্রান্ত হয়েছিলাম, ‘অভিযোগ তো করলাম, কিন্তু আসলেই কী কাজের কাজ কিছু হবে! সংশয়বাদীদের সংশয় উড়িয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কাজ হয়েছে। বিআরটিএ আমার অভিযোগ আমলে নিয়েছে। আজ সকাল সকাল ফোন করে জানিয়েছে, অভিযুক্ত চালকেরা মালিকসহ শুনানিতে হাজির। আমি গেলে শুনানি হবে এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। 

আমি হিসাব কষে দেখলাম, শুক্র-শনি বাদে মাত্র ৫ দিনেই অ্যাকশনে গেল বিআরটিএ। সিস্টেমের উপর আমার আস্থা থাকলেও এতো দ্রুত যে ফল পাবো তা ভাবিনি। সেইসব মানুষের জন্য খারাপ লাগছে, যারা আমাকে বলেছিলেন বিআরটিএ কিছুই করবে না! সবজান্তা এই ফেসবুক বিপ্লবীদের প্রতি একরাশ সমবেদনা!!! মনটা আনন্দে ভরে গেল। 

প্রথমে আমাকে সাহস যুগিয়েছেন ট্রাফিক সার্জেন্ট উৎপল সরকার। শ্যামলী এলাকার আরেকটি ঘটনায় তিনি আমার অভিযোগ আমলে নিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভারকে জরিমানা করেছিলেন। আমার ফোনে করা ওই ঘটনার ভিডিও ইতোমধ্যেই ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ দেখেছেন, শেয়ারও করছেন বহুজন। উৎপলের কাছ থেকে পাওয়া সাহসটা আজ বিশ্বাসে পরিণত করলেন বিআরটিএ'র পরিচালক (ইনফোর্সমেন্ট) এবং উপ-পরিচালক (ডিডি) মাসুদ আলম। বুঝলাম, সাহায্য চাইলে এবং সঠিক মানুষটার কাছে অভিযোগটা পৌঁছে দিতে পারলে, এই দেশেও প্রতিকার মেলে। শুনানিতে গিয়ে দেখি, হুংকার ছাড়া সেই চালক দুজন চোরের মত এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। শুনানি শুরু হতেই তারা আমার হাতে-পায়ে ধরা শুরু করলো। অথচ এরাই সেদিন কী চরম দূর্ব্যবহারটাই না করেছিল আমাদের সঙ্গে!

জানলাম, ইতিমধ্যে চালকদের লাইসেন্স এবং গাড়ীর কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে বাতিল হবে শুনানি শেষে। আমি চেয়েছিলাম, ওরা বুঝুক যে দেশে আইন-কানুন আছে। দেশটা এখনও গোল্লায় যায়নি। সেটা করা গেছে। অধিকাংশ সিএনজি চালকই আমাদের জিম্মি করলেও, বিপদে-আপদে মায়া না দেখালেও, আমার ঠিকই ওদের জনঢ় মায়া লাগলো। লাইসেন্স বাতিল হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পথে বসবে। ডিডিকে তাই অনুরোধ করলাম, 'আপনারা শুনানিতে ডেকেছেন, ওরা অপরাধ স্বীকার করেছে, আমি এতেই খুশি। প্রথম অপরাধ হলে মানবিক দিক বিবেচনায় এবং মিটারে চলবে এই মর্মে অঙ্গীকার নিয়ে ওদের এবারের মতো লঘু শাস্তিতে মাফ করে দিতে পারেন। আমি চাইনা মানুষগুলো স্থায়ী ভাবে বেকার হয়ে যাক।'

এরপর শুনানিতে ওদের বড় অঙ্কের জরিমানা হলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়নি, বাতিল হয়নি গাড়ীর পারমিশনের কাগজপত্রও। শাস্তি হোক চেয়েছি, কিন্তু পথে বসে যাক চাইনি। সংশয়বাদীরা প্রথমে বললেন, অভিযোগ করে লাভ নেই। বিআরটিএ নিজেই বড় দুর্নীতিবাজ। তারপর হাতেনাতে পুলিশী সাজার উদাহরণটা শেয়ার করার পর ভোল পাল্টে বলতে শুরু করলেন, গরীবের পেটে লাথি মেরে লাভ কী? (মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয়ের লোকেরা গরিব হলে এই শহরের শিক্ষিত লোকেদের ৮০ ভাগই দরিদ্রসীমার নিচে বাস করে) আর আজ যখন বিআরটিএ আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনলো, সংশয়বাদীরা নিশ্চয়ই নতুন কোন গীত গাইতে শুরু করবেন।  ওসব নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। তারা ফেসবুকে চুলচেরা বিশ্লেষণ আর কুতর্কের বিপ্লব করতে থাকুক। নেতিবাচক মানুষের মুখে চুনকালি মেখে দিয়ে, আসুন আমরা বরং দেশটাকে এভাবেই একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাই। যে যার যায়গা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদটা করি। 

মনে রাখবেন, আপনার প্রতিবাদটা অন্য কেউ এসে করে দিয়ে যাবে না, আপনাকেই করতে হবে। লাখো মানুষের রক্তে অর্জিত প্রিয় মাতৃভূমিকে কথায় কথায় দেষারোপ না করে, আসুন নিজের চরিত্রটা বদলাই। আপনি বদলালে, দেশও বদলাবে। কোথাও না কোথাও থেকে শুরু তো করতে হবে। আমি শুরু করে দেখালাম যে সম্ভব। আপনিও শুরু করুন। ইতোমধ্যেই অনেকেই শুরু করেছেন। দেখবেন অচিরেই আমরা ফল পেতে শুরু করবো। এই ঘটনায় যদি রতন ও ছানোয়ারের মতো ১০ জন চালকও শুধরায়, তবেই আমরা সার্থক। ধন্যবাদ বিআরটিএ, সার্জেন্ট উৎপল এবং সেইসব মানুষদের যারা ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করেছেন, নিজেরাও প্রতিবাদের প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সিএনজি সংক্রান্ত প্রতিবাদের ধারাবাহিক আপডেটের এখানেই সমাপ্তি হলো।
আমি যেভাবে অভিযোগটি করেছিলাম:
বরাবর,
পরিচালক (ইনফোর্সমেন্ট)
বিআরটিএ, ঢাকা।
বিষয়: মিটারে যেতে না চাওয়া এবং অন্যায্য ভাড়া দাবী করা সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ।

জনাব,
আমি মো. আবদুল্লাহ আল ইমরান, (নিজ ঠিকানা) এলাকার বাসিন্দা। আমি এবং আমার স্ত্রী অফিসের গাড়ী ধরতে না পারলে প্রায়শই সিনজিতে যাতায়াত করি।  গত ২২-০৯-১৬ ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে আমি একং আমার স্ত্রী হাতিরপুল মোড়ের একটু আগে সেন্ট্রাল রোডের মুথে দাঁড়িয়ে থাকা কমপক্ষে ৭-৮ টি সিএনজিকে শত অনুরোধ করেও মিটারে যেতে রাজি করাতে পারিনি। ঢাকা ডিসি অফিস পর্যন্ত যেতে কেউ কেউ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দাবী করেন। ওখানে অবস্থিত সকল সিএনজি ড্রাইভার একজোট হয়ে এই অনৈতিক দাবিটি করেন। কেউই মিটারে যেতে রাজি হননি। এমনকি ২০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার অফার করলেও তারা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন। এ অবস্থায় ঝগড়ায় না জড়িয়ে আমি অভিযুক্ত অন্তত দুটি সিএনজির নাম্বারসহ ছবি তুলতে সক্ষম হই। নাম্বার দুটি হলো - ঢাকা মেট্রো - থ ১৪১৬৬৭ এবং ঢাকা মেট্রো থ - ১২৮২৪৯। 
এরপর আপনার সঙ্গে ফোনে কথার সূত্র ধরে ছবিসহ এই অভিযোগটি দাখিল করছি। আশা করছি আপনি যাথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি প্রতীয়মান করবেন যে, দেশে এখনো আইন-কানুন বিলুপ্ত হয়নি। এ বিষয়ে শুনানিতে ডাকা হলে আমি নিজে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি সবিস্তারে জানাবো। 

অতএব, মহাদয়ের নিকট আবেদন, দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার অভিযোগটি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত সিএনজি চালক দুজনকে ডেকে যথোপযুক্ত শাস্তির ব্যাবস্থা করে বাধিত করবেন।

নিবেদক
আবদুল্লাহ আল ইমরান
ফোন:
ইমেইল:

অভিযোগের ঠিকানা:
পরিচালক (ইনফোর্সমেন্ট): 01712509058
ইমেইল: denf@brta.gov.bd
টেলিফোন: 029113133, 0258154701, 029115544
এছাড়াও বিআরটিএ'র ওয়েব সাইটে গিয়ে অনলাইনে অভিযোগ করা যাবে। ওয়েবসাইট: http://brta.gov.bd/index.php/queries-complains

Managing Director,
Four D Communications Limited and
Founder President at Dhaka University IT Society (DUITS)
বিঃদ্রঃ আমাদের পোষ্ট গুলো যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। তাহলে আর ভাল পোষ্ট নিয়ে হাজির হব।