Pages

হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জনতা ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টারের অবহেলা!

জনতা ব্যাংকের মানি এক্সচেঞ্জ কাউন্টারে ঝিম ধরে বসে থাকা যুবক বয়েসি লোকটির কাছে গিয়ে বললাম, ভাই আমি কিছু ডলার ভাঙাতে চাই। সে বলল, কত ভাঙাইবেন? আমি বললাম, বেশি না, এই ধরুন ৮৫ ডলারের মত। সে বলল, না ভাই কিনবো না। আমি বললাম, কেন কিনবেন না? সে বলল, এত কম ডলার কিনি না। শ্যাম বর্ণের এই যুবকটির মুখে এই কথা শুনে প্রতিবারের মত আবারও নতুন করে হোঁচট খেলাম।

ঢাকা এয়ারপোর্টে প্লেইন ল্যান্ড করেছিল রাত আড়াইটার নিকে। প্লেইন থেকে নেমে ইমিগ্রেশন পার হয়েই ডলার চেঞ্জ করে টাকা নেয়ার জন্য মানি এক্সচেঞ্জ বুধগুলোর দিকে গিয়েছিলাম। এই জায়গাটিতে সব বুথগুলো থেকে "ভাই আসেন, ভাই আসেন, ভাল রেইট দিবো, সব চেয়ে ভাল রেইট দিবো" বলে বিদেশ ফেরত যাত্রীদেরকে ডাক দিতে দেখা যায়। বিষয়টি আমার মোটেও পছন্দ নয়।
পৃথিবীর অন্যান্য এয়ারপোর্ট গুলোতে এধরনের দৃশ্য চোখে পরে না। আমি এতে অভ্যস্ত নই। এত কম ডলার কিনবে না জানর পর কিছুক্ষণ চুপ হয়ে ছিলাম। এর পর হুট করে ফেইসবুক পেইজ Magistrates, All Airports of Bangladesh এর কথা মনে পরে গেল, যেখানে সকল যাত্রীদের এয়ারপোর্ট সম্পৃক্ত অন্যায়, অবিচার বা ভোগান্তির বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হয়।। প্রমাণাদি সহ এয়ারপোর্টে যে কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি এই পেইজের মাধ্যমে অভিযোগ করলে সমধান ও বিচার পাওয়া যায়। তাদের পেইজের পোস্ট আর মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি।
যুবকের দিকে মুচকি হাসি দিয়ে প্রমাণাদি সংগ্রহের জন্য ডলারগুলো কাউন্টারের উপর রেখে পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে প্রথমে ডলার সহ তার একটি বড় করে ছবি নিলাম। এরপর একটু দুরে শরে গিয়ে জনতা ব্যাংক লেখা সহ বুথটির ছবি তুললাম। ঠিক মত ফোকাস না হবার কারণে দ্বিতীয় ছবিটি তুলতে একটু সময় লেগেছিল।

ছবি দুইটি তোলার পর মোবাইল ফোন পকেটে পুরে যুবকটির কাছে গেলাম। তাকে দেখে দ্বিতীয়বারের মত আবারও হোঁচট খেলাম। সে আমার ডলারগুলো মনোযোগ দিয়ে গুনছে আর ক্যালকুটারে কি যেন টিপাটিপি করছে। দৃশ্যটি দেখে মনে হচ্ছে যেন একটু আগে ঘটে যাওয়া "এত কম ডলার কিনি না" ঘটনাটি নিতান্তই একটি কল্পনা ছিল মাত্র। তার শ্যামবর্ণের চেহারায় "চোর ধরা পরে যাওয়া" ধরনের ঘটনার স্পষ্ট ছাপ দেখা যাচ্ছে। যুবকের পাশে বসে থাকা মাঝ বয়েসের ঘুম থেকে ওঠা লোকটি হাই তুলতে আমার দিকে না তাকিয়ে বলল, আপনার পাসপোর্টটা দেন। আমি আমি আমার পাসপোর্টটি তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর যুবক আমার হাতে পাসপোর্ট, ডলার চেঞ্জের রশিদ আর ৮৫ ডলারের সমপরিমাণ টাকা বুঝিয়ে দিল। সে তখনও পর্যন্ত নীরব ছিল, আমার দিকে তাকাচ্ছিল না। আমার ধারনা সে মনে মনে তখন কাউকে গালাগালি করছিল। হতে পারে এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে। "ম্যাজিস্ট্রেট হালা ডাইরিয়া হইয়া মরে না কেন" ধরনের অভিশাপ যুক্ত গালাগালি।

আমি টাকাগুলো গুলো গুনে নিয়ে যুবককে বললাম, কি ব্যাপার ভাই? একটু আগে যে বললেন কম ডলার কেনেন না, তো হঠাৎ কি হল? সে কাচুমুচু হয়ে বলল, আজকে ডলার কেনা শেষ, তাই আপনারে ঐটা বলছিলাম। আমি বললাম, ডলার কেনা শেষ, নাকি অন্য কিছু? সে হাতে পায়ে ধরার মত ভঙ্গি করে বলল, ভাই,এই ছবি কোথাও দিয়েন না, মাফ চাই, স্যারের কাছে কিছু বইলেন না। আমি হাসলাম, তাকে বললাম, "শক্তের ভক্ত আর নরমের জম" একটা বিষয় আছে, তাই না মানি চেঞ্জার সাহেব? সে আমার দিকে অপরাধ ভঙ্গিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল, আমি মনে মনে Magistrates, All Airports of Bangladesh কে স্যালুট দিতে দিতে লাগেজ নিতে হাসতে হাসতে রওনা হলাম।

বাংলাদেশ এর কুৎসিত আবর্জনাগুলো দুর করে সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করতে বিশেষ ব্যাক্তিদের সততার সাথে ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট।

Bengal Tiger