Pages

ফখরুলের কান্না ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রকৃত রূপ

একবার আমার গাড়িতে কথা হচ্ছিল আমার ড্রাইভারের সাথে, যে বাংলাদেশে ড্রাইভিংয়ের চাকরিতে ঢোকার আগে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিল। মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করার সময়ে সে কিরকম আরবি বলা শিখেছে, এই প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিয়েছিল, তার চেয়ে তার বড় ভাই ভালো আরবি বলা জানে। তার বড় ভাইয়ের আরবি বলা শুনলে নাকি স্থানীয় আরবদের সাথে কেউ পার্থক্য করতে পারবে না।

কথা প্রসঙ্গে তার বড় ভাইয়ের প্রসঙ্গ উঠায় সে বলতে লাগল, তার বড় ভাই ছিল ঢাবির মেধাবী ছাত্র, এরশাদ আমলের প্রথমসারির ছাত্র নেতা। যেই দিন এরশাদ ক্ষমতা ত্যাগ করল, সেই দিনই ক্যাম্পাসে খবর পৌঁছার সাথে সাথে তার বড় ভাই হলের জানালা দিয়ে লাফ দিল পালানোর জন্য। এটা করতে গিয়ে তার পা গেল ভেঙে। এরপর তার গায়ে গুলিও লাগে। পলাতক অবস্থায় চিকিৎসা নেয়ার সময় তাকে একজন প্রস্তাব দেয়, তুমি মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাও, বাংলাদেশে থাকলে তোমাকে মেরে ফেলা হবে। এই পরামর্শ অনুযায়ী সে চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যে, সাথে করে নিয়ে যায় তার ছোট ভাই অর্থাৎ আমার ড্রাইভারকে।
যদি আমার ড্রাইভারের বড় ভাই বাংলাদেশে তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারত, তাহলে হয়তো সে বড় কোন অফিসার হতে পারত। কিন্তু এখন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সে হয়েছে সেলস এজেন্ট, ভাল আরবী বলতে পারার গুণে। অনেকেই হয়তো মির্জা ফখরুলের এই কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়েছেন যে, “আমাদের ছেলেরা রিকশা চালায়”। কিন্তু সত্যি বলতে কী জানেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতির নিয়মই এটি। ধরুন এখন যারা ছাত্রাবস্থায় আওয়ামী লীগ করছে, দল পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় হল ছাড়তে হবে। আপনারা জানেন যে, ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় হলকে বিরোধী দলমুক্ত করাটা একটা স্বাভাবিক নিয়ম। এতে করে বিরোধী দলের ছাত্র রাজনীতি যারা করে, অবধারিতভাবেই তাদের পড়াশোনার ইতি ঘটে।

আমার অধীনস্থ এক হেল্পারকে তো এলাকা থেকেই বিতাড়িত করা হয়েছিল। সে পড়াশোনা করত মফস্বলের এক কলেজে, সেখানে ছাত্র রাজনীতি করত। যেই ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলো, অমনি তার নামে স্থানীয় থানায় অনেকগুলো মামলা দায়ের করা হলো। অবস্থা এমন হলো, তাকে এলাকায় গেলেই সাথে সাথে পুলিশ গ্রেফতার করবে। তখন সে ঢাকায় চলে আসল, তার প্রভাবশালী এক আত্মীয়কে ধরে হেল্পারের চাকরি নিল। পড়াশোনা করলে সে বড় কিছু হতে পারত, কিন্তু রাজনীতি তাকে বাধ্য করেছে হেল্পার কিংবা ড্রাইভার হতে।

এসব কারণে ফখরুলের কান্না আমার মনে কোনপ্রকার করুণার উদ্রেক করে না। কারণ এখন যেমন বিএনপির কর্মীদের রিকশা চালাতে হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই ফখরুলেরা ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকেও রিকশা চালাতে হবে। তখন ফখরুলেরাও কোন দয়া-মায়া করবে না। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো গণতন্ত্রকেই বিলুপ্ত করে দেয়া এবং একক শক্তিশালী একজন অভিভাবকের হাতে জাতির সমস্ত শাসনভার তুলে দেয়া।
ভারতবর্ষের ইতিহাস যদি আমরা দেখি, তাহলে লক্ষ্য করব ভারতবর্ষের মুসলমানরা মূলত পরিচালিত হয়েছে ওলীআল্লাহদের নেতৃত্বে। পাঠান-মুঘল এরা ছিল শাসক, কিন্তু জাতির সত্যিকার নেতা ছিলেন ওলীআল্লাহগণ। যখন সুলতান গিয়াসউদ্দীন আযমশাহকে শহীদ করে অত্যাচারী গণেশ ক্ষমতা দখল করল, তখন হযরত নূর কুতুবে আলম রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। যখন বাদশাহ আকবর দ্বীনে ইলাহী চালু করল, তখন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

ব্রিটিশ আমলে গোটা ভারতবর্ষের মুসলমানদের অভিভাবক ছিলেন সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি। শহীদ তিতুমীর ছিলেন সাইয়্যিদ আহমদ শহীদের অনুসারী। সিপাহী বিদ্রোহ সহ ব্রিটিশবিরোধী যতো আন্দোলন, সমস্তই সাইয়্যিদ আহমদ শহীদের অনুসারীদেরই প্রচেষ্টার ফসল।

তাঁরা ছিলেন লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, গোটা মুসলিম উম্মাহর একক অভিভাবক, একক ত্রাণকর্তা। এরকম একজন অভিভাবকেরই দরকার বর্তমানে গোটা বিশ্বের মুসলমানদের, যা কিনা স্বয়ং আল্লাহ পাকের তরফ থেকেই পাওয়া সম্ভব। ভোটাভুটি বা গণতন্ত্র করে আমরা তা পাব না। গণতন্ত্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চাইলে মুসলমানদের উচিত বেশি বেশি তওবা-এস্তেগফার করা, কারণ এ ছাড়া তারা কখনোই খোদায়ী অভিভাবক লাভ করতে সক্ষম হবে না।