কোরবানীর ঈদ নিয়ে সাত পর্বের নাটক নির্মাণ করছে আজাদ আল মামুন ও সূর্য আহমেদ। নাটকের নাম ‘পশু কোরবানী’। নাটকের কাহিনী হলো সমাজের ধনী শ্রেণীটিকে নিয়ে, যারা ঈদের আগে পশু কোরবানী নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামে। নাটকে এই প্রতিযোগিতাকে নেগেটিভ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানো হয়েছে, আর দেখানো হয়েছে সনি-মাশিয়াত তথা নাটকের নায়ক-নায়িকার কথিত ‘স্বপ্নের কোরবানী’। (সূত্র: http://goo.gl/R5mGBR)
অনেকেই হয়তো চিন্তা করছেন, নাট্যকার তো ভাল কথাই বলছে। কিন্তু বর্তমান মিডিয়ার যে কুরবানী বিরোধী নীতি, সেখানে এই ‘ভাল’র আড়ালে কী রয়েছে তা নিয়ে চিন্তার অবকাশ রয়েছে। বর্তমান মিডিয়া পশুর অ্যানথ্রাক্স, মোটাতাজাকরণ এসব নিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনমনে ভীতির সৃষ্টি করতে চায়। কুরবানীর হাট, পশু জবাইয়ের বর্জ্য এসব নিয়ে নেগেটিভ নিউজ প্রচার করে মানুষের মধ্য থেকে কুরবানী সম্পর্কিত যে উৎসবের অনুভূতি, তা নষ্ট করে দিতে চায়। সেক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে এই নাটকের উদ্দেশ্য ‘ভাল’ মনে হলেও তা আসলে খারাপ।
প্রথমেই ধরা যাক, কুরবানী নিয়ে প্রতিযোগিতা করাটা আদৌ কী কোন গর্হিত কাজ হতে পারে কিনা? স্বয়ং আল্লাহ পাকই বলেছেন “তোমরা নেক কাজে প্রতিযোগিতা কর।” (সূরা বাকারা : ১৪৮) এ কারণে সাহাবায়ে কিরামগণ কে কতো বেশি টাকা-পয়সা খরচ করতে পারেন, তা নিয়ে সবসময় প্রতিযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে তাবুকের যুদ্ধের ঘটনাটি তো আমরা সবাই জানি। রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যুদ্ধে প্রয়োজনীয় অর্থ খরচের আহবান করলেন, তখন হযরত উসমান রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সমুদয় সম্পত্তির ৩ ভাগের ১ ভাগ দিয়ে দিলেন। হযরত উমর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু দিলেন তাঁর সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক।
এরপর আসলেন হযরত আবু বকর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি উনার বাড়ির সমস্ত কিছু, এমনকি চুলার শিকটাও পর্যন্ত এনে হাজির করলেন রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট। বাড়িতে কী রেখে এসেছেন- এই প্রশ্নে তিনি বললেন- আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাকের রসুলের মুহব্বতকে রেখে এসেছি। (আবূ দাউদ শরীফ)
হযরত উমর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহুকে নিয়ে এখানে একটি ঘটনা না উল্লেখ করলেই নয়। তিনি কিন্তু প্রতিযোগিতার নিয়তেই উনার অর্ধেক সম্পত্তি এনে হাজির করেছিলেন। কিন্তু যখনই হযরত আবু বকর রদ্বিআল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সমুদয় সম্পত্তি এনে হাজির করলেন, তখনই তিনি বললেন, আমি আর কখনই কোনো ব্যাপারে উনার সাথে প্রতিযোগিতায় অগ্রগণ্য হতে পারবো না। (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
সুতরাং কুরবানী নিয়ে ধনী মুসলমানদের মধ্যে অর্থ খরচের যে প্রতিযোগিতা হয়, তা কখনোই খারাপ নয়। বরং চিন্তা করুন, এই যে কুরবানীর পশুর দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ, যে উত্তেজনা তৈরী হয়, তা কিন্তু সমাজের মানুষকে ইসলামের একটি অনুষঙ্গের দিকেই ধাবিত করে। গান-বাজনা কিংবা অন্যান্য হারাম কাজের তুলনায় কে কতো টাকা দিয়ে কুরবানী দিল, সেটি নিয়েই মানুষ কমপক্ষে পাঁচ-দশদিন আলোচনায় মেতে থাকে। এ কারণেই কুরবানীর পশু নিয়ে প্রতিযোগিতাকে মিডিয়া নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করছে। বিপরীতে পূজার মূর্তি ও মণ্ডপের ডেকোরেশন নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা হয়, তা কিন্তু মিডিয়া পজিটিভলিই হাইলাইট করে। কারণ মিডিয়া চায়, হিন্দুদের মণ্ডপ নিয়ে বেশি বেশি প্রচার হোক, আলোচনা হোক, বিপরীতে মুসলমানদের কুরবানী নিয়ে সবাই চুপ করে থাকুক। হিন্দুরা সব জাকজমক করুক, আর মুসলমানরা ম্যাড়মেড়ে নির্জীব হয়ে থাকুক।
এতে করে যা হবে, তা হলো মুসলমানরা নিজেরাই কুরবানীর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে হিন্দুদের মণ্ডপের প্রতি আকৃষ্ট হবে। মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও পিছনের সারিতে পড়ে যাবে, আর হিন্দুরা সামনে চলে আসবে। মিডিয়া কিন্তু সেটাই চায়, আর সে কারণেই এই ‘পশু কোরবানী’ নামক নাটকটি প্রচার করা হচ্ছে।
ধনী মুসলমানদের শুধু দামী পশু কুরবানী দিলেই হবে না, বরং লক্ষ্য রাখা উচিত যেন বেশি বেশি পশু কুরবানী দেয়া যায়। রসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জে ১০০টি উট কুরবানী দিয়েছিলেন। সমস্ত নবী রসূলদের জীবনীতে আপনারা এমনটিই পাবেন, ১০০-২০০র নীচে সাধারণত তাঁরা কুরবানী দিতেন না। বিশেষ করে বর্তমানে উপমহাদেশে যে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন চলছে, সেটাকে রুখে দিতে হলে বেশি বেশি কুরবানী দেয়ার বিকল্প নেই। আমাদের বাংলাদেশের মেজবানের ন্যায় সংস্কৃতিগুলো, যেখানে অগুণতি গরু জবাই করা হয়, সেগুলো কিন্তু আমাদের মুসলিম পরিচয়ের রক্ষাকবচ। ধনী মুসলমানদের স্বপ্রণোদিত হয়ে এতো বেশি পশু কুরবানী করা উচিত ও মিডিয়ায় প্রচার করা উচিত, যেন সেটার নীচে পূজা সংশ্লিষ্ট সমস্ত খবরাখবর চাপা পড়ে যায়।