Pages

কোয়ান্টাম মেথড এর ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী!

কোয়ান্টাম মেথড কি?
তাদের ভাষ্যমতে এককথায় এটি হল- Science of Living. আশ্রম ও খানকার চৌহদ্দি থেকে বের করে ধ্যানকে গণমানুষের আত্মউন্নয়ন ও ব্যক্তিত্বের বিকাশে প্রয়োগ করাই তাদের উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য যে, লেখাটিতে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম মেথড সংক্রান্ত সকল তথ্য তাদের ওয়েবসাইট, লিফলেট এবং টেক্সটবুক (সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড- মহাজাতক: পরিবর্ধিত নতুন সংস্করণঃ জানুয়ারী, ২০০০) থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।

কোয়ান্টাম মেথড বলতে আসলে তারা কি বুঝাচ্ছেন তা জানার উদ্দেশ্য আমরা ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত ‘সাফল্যের চাবিকাঠি কোয়ান্টাম মেথড-মহাজাতক’ বইটির বিভিন্ন অধ্যায়ের মূল বক্তব্যের উপর আলোকপাত করব। সাথে সাথে এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করব এবং টেক্সটবুকটির পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করার চেষ্টা করব।
কোয়ান্টাম টেক্সটবুক- মেডিটেশন:
শৃঙ্খলা মুক্তির পথ আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে মানুষ অপার সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু ভ্রান্ত বিশ্বাস/ সংস্কার তথা মনোজাগতিক শিকল তাকে পরিণত করে কর্মবিমুখ, ব্যর্থ কাপুরুষে। অন্যদিকে মুক্ত মানুষ বিশ্বাস হচ্ছে সকল সাফল্য অর্জনের ভিত্তি। বিশ্বাসই রোগ নিরাময় করে, ব্যর্থতাকে সাফল্যে আর অশান্তিকে প্রশান্তিতে রূপান্তরিত করে। দৈনন্দিন জীবন বেশিরভাগ চিন্তাশীল মানুষের জন্যই যুগে যুগে ছিল এক ক্লান্তিকর বিড়ম্বনা। ভাত খাওয়া, গোসল করা, কাপড় পরা, সংসার করা, প্রার্থনা করার একঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি চেয়েছেন তারা। ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তির পথ হচ্ছে মেডিটেশন। তখন প্রতিবারের প্রার্থনাতেঁই আপনি পুলকিত হবেন, প্রতিটি সেজদাই পরিণত হবে মেরাজে। মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে। মেডিটেশনের পথ ধরেই আপনি অতিক্রম করতে পারবেন আপনার জৈবিক অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা।

এ প্রসংগে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী:
ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের শৃঙ্খল মুক্তির পথ হচ্ছে মেডিটেশন- ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মারাত্মক ভুল ধারণা। আল্লাহ প্রদত্ত ও রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত চির কল্যাণময়, শান্তি ও মুক্তির পথ সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবেই মানুষ এ ধরণের মুখরোচক শ্লোগনে বিভ্রান্ত হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর জিকির, তওবা-ইস্তিগফার, মৃত্যুর স্মরন ও কুরআন তিলাওয়াত দ্বারাই কলবের কালিমা দুর হয়ে যায় এবং কলব পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়- হৃদয় প্রশান্ত হয়।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: তারা এমন লোক, যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর যিকরে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়। হুঁশিয়ার! আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়। -(সুরা রাদ : ২৮)

আল্লাহর জিকির: রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক জিনিস পরিস্কার করার জন্য যন্ত্র বা রেত আছে। আর কলবসমুহকে পরিষ্কার করার যন্ত্র হল আল্লাহর জিকির। -(বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবাহ, তাবরানী
মিশকাত)

তওবা ও ইস্তিগফার: হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন কোন মু’মিন বান্দা গুনাহ করে তখন তার কলবের মধ্যে একটি দাগ পড়ে যায়। অতঃপর যদি সে তওবাহ ও ইস্তিগফার করে তাহলে তার কলব পরিষ্কার হয়ে যায়। - (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)

মৃত্যুর স্মরন ও কুরআন তিলাওয়াত: হযরত ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : নিশ্চয়ই কলবসমূহে মরিচা পড়ে যেমন লোহায় পানি লাগলে মরিচা পড়ে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা পরিষ্কার করার উপায় কি? জবাবে তিনি বললেন: মৃত্যুকে খুব বেশি স্মরণ করা আর কুরআন তিলাওয়াত করা।
“প্রতিবারের প্রার্থনাতেঁই আপনি পুলকিত হবেন, প্রতিটি সেজদাই পরিণত হবে মেরাজে” - এটি একটি মুখরোচক শ্লোগান ছাড়া আর কিছুই নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে আল্লাহওয়ালাগণের সোহবাতে মুরাকাবার ও মুজাহাদার মাধ্যমে এ ধরণের অবস্থা অর্জিত হতে পারে। মেডিটেশন বা যোগী-সন্নাসীদের ধ্যানের মাধ্যমে নয়। 

রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যা কিছু কাউকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে অথবা আগুন থেকে দূরবর্তী করে তার এমন কিছুই নেই যা কিনা তোমাদের জন্য স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়নি।-[তাবারানীর আল মুজাম আল কাবীর]

“মেডিটেশনের মাধ্যমেই আপনি সংযোগ সাধন করতে পারেন আপনার ‘অন্তরের আমি’র সাথে, আপনার শক্তির মূল উৎসের সাথে”- কোয়ান্টাম মেডিটেশনের এই দৃষ্টিভংগি ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। ইসলামের দৃষ্টিতে এই অন্তরের আমি এর অনুসরণের পরিণতি হল জাহান্নাম, বরং মুক্তির পথ হল-এই অন্তরের আমি এর অনুসরণ থেকে নিজেকে হেফাজত করা।

এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: অতঃপর যে সীমালংঘন করে, পৃথিবীর জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়, জাহান্নামই হবে তার আবাস। আর যে নিজ প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয়ে প্রকম্পিত হয় এবং নাফ্সের (প্রবৃত্তির বা অন্তরের আমি এর ) অনুসরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার বাসস্থান।-(সূরা নাযিয়াত: আয়াত ৩৭-৪১)

অন্তরের এই আমি হল নাফসে আম্মারা, যার উপর শয়তান ভর করে মানুষকে বিপথগামী করে। আর শয়তানের ভর করা বা ওয়াস-ওয়াসা থেকে মুক্তির পথ হল- আল্লাহর জিকির। হযরত ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: শয়তান মানুষের কলবের মধ্যে আসন গেড়ে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন শয়তান কলব ছেড়ে পিছনে সরে যায়। আর যখন জিকির থেকে অমনোযোগী হয়ে যায়, তখন আবার (কলবের মধ্যে) ওয়াস-ওয়াসা দিতে থাকে। -(ইমাম বুখারী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)

ইসলাম কেবল আল্লাহকেই সকল শক্তির মূল উৎস ও সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করে, যিনি আরশের উপরে অধিষ্ঠিত এবং যাঁর সাথে গোটা সৃষ্টির কারো কোন সাদৃশ্য নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে এখানে আর একটি মারাত্মক ভুল - মানুষের ভিতর স্রষ্টার অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, যা হচ্ছে সর্বেশ্বরবাদ, যা একাধারে কুফর ও শিরক। যেমন- হুলুল : কতিপয় বিভ্রান্ত সুফী ও অন্যান্য পথভ্রষ্ট দলের পরিভাষায় হুলুল সৃষ্টির মাঝে স্রষ্টার অবস্থান, গোটা সৃষ্টিজগতে কিংবা এর কোন অংশে। গোটা সৃষ্টিজগতে স্রষ্টার অবস্থানের মতবাদ এই যে স্রষ্টা সৃষ্টি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও সর্বত্র বিরাজমান।

ওয়াহদাতুল উজুদ: স্রষ্টা ও গোটা সৃষ্টি একই সত্তা হওয়ার মতবাদকে ‘ওয়াহদাতুল উজুদ’( ﻭَﺣْﺪَﺓ ﺍﻟﻮُﺟُﻮﺩ ) বলা হয়। যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির কোন অংশ একই সত্তা হওয়ায় বিশ্বাসী তারা ধারণা করে যে নবী, সৎকর্মশীল, দার্শনিক স্রষ্টারই অংশ! এরা শুধুমাত্র অপবিত্র-নোংড়া বস্তুকে স্রষ্টার অংশ হওয়া থেকে বাদ দেয়। আসলে আল্লাহর জাত নহে বরং কুদরত ও সিফাত সর্বত্র কার্যকর। কতিপয় দার্শনিক এ সকল জাহিলী ও গোমরাহী মতবাদের অনুসারী ছিল। ইসলামের দৃষ্টিতে হুলুল ও ওয়াহদাতুল উজুদ ইত্যাদি ধারণাসমূহ সুস্পষ্ট কুফর, শিরক ও মারাত্মক ধর্মদ্রোহিতা। কদর্যতার দিক থেকে ওয়াহদাতুল উজুদ হুলুলের চেয়েও মারাত্মক, কেননা তা সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে এক সত্তায় পরিণত করেছে। সুতরাং এ ধরণের বিভ্রান্তি থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সন্ন্যাসবাদঃ
ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম বা মানব স্বভাবজাত জীবন ব্যবস্থার নাম। পার্থিব লোভ লালসা ও ভোগ বিলাস যথাসম্ভব পরিত্যাগ করা ইসলাম ধর্মের একটি মৌলিক শিক্ষানীতি হলেও ইসলামে বৈরাগ্যবাদ বা সন্ন্যাসবাদের কোন স্থান নেই। আজকের খ্রিষ্টধর্মের ধর্ম প্রচারকদের মাঝে এর বহুল প্রচার থাকলেও এটা আসলে কোন ঐশী নির্দেশ নয়। খ্রিষ্টান ধার্মিকগণ যখন অনুভব করলেন বিবাহ ও ঘর-সংসার করে যথেষ্ট আখিরাতমুখিতা অর্জন করা যায় না, তখন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মানবীয় বুদ্ধি বিবেক খাটিয়ে এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন। ইসলামের মাঝেও একদল মানুষ অনুরূপ নতুন পদ্ধতির সূচনা করেন যাদের আক্বীদা, কার্যকলাপ কোন কিছুই শরীয়াহ সম্মত নয়।

কোয়ান্টাম টেক্সটবুক- মন সকল শক্তির উৎস:
এরপর অধ্যায় ১, ২ তে- মন সকল শক্তির উৎস, চেতনা অবিনশ্বর, প্রাণ রহস্যের চাবিকাঠি যে বিশ্বাস তা এক নতুন বিশ্বদৃষ্টি উন্মোচন (যাতে সব কিছুকে ব্যাখ্যা করা যায় কোয়ান্টা ফিজিক্সের মাধ্যমে), বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং নানা সফল ব্যক্তিদের (যার মাঝে রয়েছে বিশিষ্ট ব্যালে নর্তকী, আত্মস্বীকৃত নাস্তিক স্টিফেন হকিং) জীবন কণিকা থেকে প্রমাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিস্তারিত উদাহরণ দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশে ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃত এবং আত্ম উন্নয়নে ধ্যান পদ্ধতির প্রবর্তক প্রফেসর এম.ইউ আহমেদের। তিনি ক্লিনিক্যালী মৃত্যুবরণ করার পরও পুনরায় জীবন লাভ করেন শুধু তাকে বাঁচতে হবে, তিনি ছাড়া দেশে নির্ভরযোগ্য মনোচিকিৎসক নেই......তার এই দৃঢ় বিশ্বাসের জোরে। -(পৃঃ ২২-২৪)

অধ্যায় ৩- এ ব্রেনকে কম্পিঊটারের সাথে তুলনা করে সকল প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অধ্যায় ৪ অনুযায়ী ব্রেনকে সুসংহতভাবে ব্যবহার করার নেপথ্যনায়ক হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। প্রোআক্টিভ হতে উৎসাহিত করা হয়েছে বাইবেল এবং কুরআনে উল্লেখিত ইঊসুফ (আ.) এর কাহিনী থেকে!

অধ্যায় ৫-এ ‘ধ্যানাবস্থার প্রথম পদক্ষেপ’ শিরোনামে ব্রেন ওয়েভ প্যাটার্ণ সারণী দেয়া হয়েছে, যেখানে থিটা লেভেল সম্পর্কে বলা হয়েছে মেডিটেশনকালে সাধকরা এই স্তরে প্রবেশ করেই মহাচৈতন্যের (super consciousness) সাথে সংযোগ স্থাপন করতেন। এর পরবর্তী লেভেল-ডেল্টাতে দরবেশ ঋষিরা এই স্তরেও সজাগ থাকেন আবার মহাচৈতন্যে লীনও হতে পারেন -(পৃঃ ৫৮)। যদিও এই মহাচৈতন্যের সংজ্ঞা বইটির কোথাও সুস্পষ্টভাবে দেয়া নেই।

এ প্রসংগে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী:
“মন সকল শক্তির উৎস, চেতনা অবিনশ্বর, প্রাণ রহস্যের চাবিকাঠি” কোয়ান্টাম মেডিটেশনের এ বিশ্বাস ও দৃষ্টিভংগি পরিস্কারভাবে কুফর ও শিরক। কেননা, ইসলাম কেবল আল্লাহকেই সকল শক্তির মূল উৎস ও সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করে। অন্য কোন কিছু সকল শক্তির উৎস, অবিনশ্বর, প্রাণ রহস্যের চাবিকাঠি মনে করা বা বিশ্বাস করা আল্লাহর সাথে সুস্পষ্ট শিরক।

“মেডিটেশনকালে সাধকরা এই স্তরে প্রবেশ করেই মহাচৈতন্যের (super consciousness) সাথে সংযোগ স্থাপন করতেন” - এই মহাচৈতন্যের ধারণা একটি ধংসাত্মক বিদআত, কুফুর ও শিরক। যা মানুষকে মূল্যবান ঈমান থেকে খারিজ করে এবং কুফর ও শিরকের পথে ধাবিত করে। ইসলাম মানুষকে আল্লাহর সাথে মহব্বতের সংযোগ স্থাপনের
শিক্ষা দেয়, কোন প্রকার মহাচৈতন্যের সাথে নয় এবং তা অর্জনের একমাত্র পথ হল রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। এ প্রসংগে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: (হে রসূল!) আপনি বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান: আয়াত-৩১)

কোয়ান্টাম টেক্সটবুক- শিথিলায়ন:
মেডিটেশনের প্রথম ধাপ হচ্ছে ‘শিথিলায়ন’ যার মাধ্যমে ব্রেন ওয়েভকে আলফা লেভেলে নিয়ে মনের ধ্যানাবস্থা সৃষ্টি করা হয়। তাদের ভাষ্য: ‘শিথিলায়ন’ পুরোপুরি আয়ত্ত হলেই আপনি মনের শক্তিবলয় নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হাতে পাবেন। ধ্যানাবস্থায় মন হয় ত্রিকালদর্শী, চেতনা অতিক্রম করে সকল বস্তুগত সীমা। মনের এই ধ্যানাবস্থার শক্তিকে প্রয়োগ করেই প্রাচ্যের সাধক দরবেশ ঋষিরা একদিন আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। ইচ্ছা করেছেন– ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন – মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে। আপনিও এ চাবিকাঠিকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করতে পারেন অতিচেতনা।

এই চাবিকাঠি দিয়েই দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম কাজ করছে তার সবটাকেই আপনি নিজের ও মানবতার কল্যাণে সক্রিয় করে তুলতে পারবেন। -(কোয়ান্টাম টেক্সটবুক : পৃঃ ৫৯)

অধ্যায় ৬ তে ‘শিথিলায়ন’ প্রক্রিয়া অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। অধ্যায় ৭ ও ৮ তে নানা আত্মবিনাশী প্রোগ্রাম যেমন নেতিবাচক চিন্তা, হতাশা, অনুশোচনা, রাগ, হীণমন্যতা ইত্যাদি মোকাবেলা করার অব্যর্থ কৌশল হিসেবে ‘শিথিলায়ন’ কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

অধ্যায় ৯, ১০ তে আত্মবিকাশী প্রোগ্রাম হিসেবে অটোসাজেশন এবং মনছবির বিবরণ দেয়া হয়েছে। অধ্যায় ১১, ১২, ১৩ তে যথাক্রমে কল্পনাশক্তি, মনোযোগ বাড়ানোর কৌশল জানানো হয়েছে। অধ্যায় ১৪ তে কোয়ান্টা সংকেত, অধ্যায় ১৫ তে জাগৃতি এবং ঘুম নিয়ন্ত্রনের উপায়, অধ্যায় ১৬ তে স্বপ্নের সৃজনশীল প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে যেখানে
ইস্তেখারা সালাতকে বর্ণনা করা হয়েছে স্বপ্নচর্চা ও এর সৃজনশীল প্রয়োগের একটি বিশেষ মাত্রা হিসেবে। অধ্যায় ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১ গুলোতে যথাক্রমে ছাত্রজীবনে সফল হবার উপায়, কোয়ান্টাম নিরাময়, ওজন নিয়ন্ত্রনের উপায়, ড্রাগ এবং নেশা থেকে বিরত থাকার উপায় এবং সুস্বাস্থ্যের কোয়ান্টাম ভিত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

এতক্ষণ ধরে বইটিতে ধ্যানের প্রথম ধাপের কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে বাকি ধাপগুলোর ব্যাপারে শুধু আভাস দেয়া হয়েছে যাকে বলা হয়েছে অতিচেতনার পথে যাত্রা। এর পথ ধরেই কোয়ান্টাম গ্র্যাজুয়েটরা কমাণ্ড সেন্টার এবং প্রকৃতির সাথে একাত্মতার অনুভূতি লাভ করেন। নিচে আমরা বাছাই করা কিছু বিষয়ের উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

এ প্রসংগে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী:
শিথিলায়ণন প্রক্রিয়াকে আস্তিক-নাস্তিক, দরবেশ-ঋষি, মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য আত্মিক উন্নতির পথ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইসলাম সম্পর্কে যার নুন্যতম জ্ঞান রয়েছে তিনিও এই দাবীর অসারতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। ইসলামের বিধান অনুযায়ী আত্মিক উন্নতির পথ নির্ধারিত। এর সাথে বুদ্ধ, যোগী, সন্যাসী, ঋষিদের অনুসৃত শিথিলায়ন পদ্ধতির কোন সম্পর্ক নাই। কুরআন ও ছুন্নাহর বিধান অনুযায়ী আত্মিক উন্নতি কেবলমাত্র নিষ্ঠাবান মুসলিমদেরই হয়ে থাকে এবং তাদের আত্মিক উন্নতির স্তর ঈমান, ইয়াকীন ও আমলের বিশূদ্ধতার মাত্রার উপর নির্ভর করে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদী ও অন্যান্য ধর্মলম্বীদের আদর্শ যেমন ভিন্ন, তাদের আত্মিক উন্নতির ধারণাও ভিন্ন। আসলে যাদের আত্মা কুফর ও শিরকের আবরণে আচ্ছাদিত তাদের আবার আত্মিক উন্নতি কুফর ও শিরকের দিকেই হয়ে থাকে, আল্লাহর মহব্বতের দিকে নয়। আর শিথিলায়ন ও মেডিটেশন পদ্ধতিতে যদি আত্মিক উন্নতি হয় তাহলে তা কখনও ইসলামের পথ হতে পারে না।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: নিশ্চয়ই যারা কাফির, আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন অথবা না করুন, তাদের জন্য দুটোই সমান, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের অন্তর ও কানসমূহের উপর (অবিরাম আল্লাহদ্রোহীতা ও নাফারমানীর কারণে) মোহর মেরে দিয়েছেন, তাদের চোখসমূহের উপর রয়েছে পর্দা এবং তাদের জন্য আছে চরম শাস্তি। (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ৬-৭)

তিনি আরও বলেন: আর আমি বহু জ্বিন এবং মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তারা তা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে না, তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখার চেষ্টা করে না, তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনার চেষ্টা করে না। তারা পশুর মত, এমনকি পশুর চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট। বস্তুত তারাই উদাসীন। -(সূরা আরাফঃ আয়াত ১৭৯)

“ইচ্ছা করেছেন – ঘটনা ঘটেছে। ইচ্ছা করেছেন – মানুষ রোগমুক্ত হয়েছে। আপনিও এ চাবিকাঠিকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করতে পারেন অতিচেতনা” –এ ধরনের বিশ্বাস ও কর্ম তৎপরতা পরিস্কার কুফর ও শিরক। ইসলাম কেবল আল্লাহকেই সকল শক্তির মূল উৎস, যাঁর সাথে গোটা সৃষ্টির কারো কোন সাদৃশ্য নেই। “কুন” শব্দ ব্যবহারে ইচ্ছার মাধ্যমে যে কোন ঘটানোর মালিক একমাত্র আল্লাহ। কোয়ান্টাম মেডিটেশনে এই “কুন” শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ইচ্ছা শক্তির প্রতিফলন সুস্পষ্ট শিরক।

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন: যখন তিনি কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন তাঁকে কেবল বলতে হয় হও- ফলে তা হয়ে যায়। অতএব মহাপবিত্র ও মহাপ্রশংসিত আল্লাহ। তাঁর হাতে আছে সকল বিষয়ের সকল ক্ষমতা। আর তাঁর নিকটেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। - (সূরা ইয়াসীন : ৮২-৮৩)

সুতরাং উল্লেখিত ধারণায় বিশ্বাস করলে, প্রয়োগ করলে এবং ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কিছু ঘটেছে বলে মনে মনে বিশ্বাস করলে তিনি ঈমান থেকে খারিজ হয়ে যাবেন, আল্লাহর দরবারে কাফির ও মুশরিক হিসাবে গন্য হবেন, যদিও তিনি নিজেকে মুসলিম বলে ধারণা করেন, বা নামাজ-রোজা পালন করেন। কোয়ান্টাম এভাবেই সবাইকে শিরক ও কুফরের দিকে ধাবিত করছে।

বিঃদ্রঃ আমাদের পোষ্ট গুলো যদি আপনার ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। তাহলে আর ভাল পোষ্ট নিয়ে হাজির হব।

এফ.এ.ভি.পি & ইনচার্জ
কুলাউড়া সাংগঠনিক অফিস, ১৩৯
ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কো: লি:
কুলাউরা, মৌলভীবাজার।