সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্য সম্পর্কে প্রতিটি মানুষেরই জ্ঞান থাকা উচিত। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ জীবনের কোন না কোন সময়ে জন্ডিসের সমস্যায় ভুগেন। অনেক সময় একজন মানুষের জীবন-মৃত্যুও নির্ভর করে জন্ডিসের ভয়াবহতার উপর। সচেতন থাকলে জন্ডিসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
জেনে রাখুন জন্ডিসের কারণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে। আসলে জন্ডিস কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে মূলত জন্ডিস হয়ে থাকে। এসময় ত্বক-চোখ-মিউকাস মেমব্রেনে হলুদাভ রঙ দেখা যায়।
জন্ডিসের উপসর্গ:
শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন চামড়া, চোখ, মুখগহবর হলূদ বর্ণ ধারণ করা, প্রস্রাবের রঙ হলুদ হওয়া, পায়খানা ফ্যাকাসে হওয়া, বমি বমি ভাব ও তলপেটে ব্যাথা, শরীর দুর্বল হয়ে পড়া, ক্ষিদামন্দা, জ্বর, মাংসপেশী বা জয়েন্ট এ ব্যথা, কালচে মুত্র, কাদার মত মল ও চুলকানি দেখা যায়। কারো কারো জ্বর হতে পারে। পেট ও পায়ে পানি আসতে পারে।
জন্ডিসের কারণ:
রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। আমাদের রক্তের লোহিত কণিকাগুলো একটা সময়ে স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙ্গে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে যা পরবর্তীতে লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সাথে পিত্তনালীর মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। অন্ত্র থেকে বিলিরুবিন পায়খানার মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। বিলিরুবিনের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যে কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যায় আর দেখা দেয় জন্ডিস। যেসব রোগে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেসব রোগে জন্ডিস দেখা দেয়। যেমন লিভারে হেপাটাইটিস ভাইরাসের আক্রমন; মদ, অতিরিক্ত প্যারাসিটামল বা বিষাক্ত মাশরুম সেবনে লিভার ড্যামেজ, কিছু রোগে লিভারে অতিরিক্ত আয়ন জমে লিভার ড্যামেজ, শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষগুলোর অতি সক্রিয় হয়ে গিয়ে লিভারকে আক্রমণ অথবা জন্মগত ত্রুটির কারণে লিভারের সঙ্গে অন্ত্রের সংযোগ স্থলে কোন প্রকার বাঁধা। এছাড়াও যদি কোন কারণে শরীরের লোহিত রক্তকনিকা অতিরিক্ত ভাঙ্গতে থাকে তাহলেও জন্ডিস দেখা দেয়।
জন্ডিসের প্রকারভেদ:
জন্ডিসকে তিনভাগে ভাগ করা যায়-
১. প্রি-হেপার্টিক: রক্তের লোহিত কনিকা কোন কারণে বেশি বেশি ভাঙলে। যেমন: ক. হিমোলাইটিক এনেমিয়া, খ. ম্যালেরিয়া, গ. থ্যালাসেমিয়া।
২. হেপাটিক: লিভারের মধ্যে কোন সমস্যা থাকলে। অধিকাংশ জন্ডিস এ কারণেই হয়ে থাকে। যেমন: ভাইরাল হেপাটাইটিস (অ,ই,ঈ,উ,ঊ), অতিরিক্ত মদাপানের ফলে, লিভার ক্যান্সার হলে।
৩. পোস্ট হেপার্টিক পিত্ত লিভারে তৈরি হবার পর লিভার থেকে বের হবার রাস্তায় কোন সমস্যা থাকলে। যেমন: পিত্তনালীয় রাস্তায় পাথর, পিত্তনালীর ক্যান্সার।
জন্ডিস বুঝতে হলে কী করবেন?
আপনার জন্ডিস আছে কি-নাই তা সহজেই রক্তের বিলিরুবিল পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন।
স্বাভাবিক বিলিরুবিন 0.২-১.২ মি.গ্রা./ডি. লি.
সুপ্ত জন্ডিস ১.২-২ মি. গ্রা./ডি: লি.
পূর্ন জন্ডিস ২ মি:গ্রা./ডি. লি.
যদি বিলিরুবিনের মাত্রা ২মি.গ্রা/ ডি. লি.-এর বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
জন্ডিস প্রতিরোধের উপায়:
জন্ডিস থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও নিয়মিত টেস্ট করানো। এছাড়া জন্ডিস প্রতিরোধে নিচের বিষয়গুলোও মেনে চলা উচিত।
১. হেপাটাইটিস এ এবং ই খাদ্য ও পানির মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। আর বি, সি এবং ডি দূষিত রক্ত, সিরিঞ্জ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। সবসময় বিশুদ্ধ খাদ্য ও পানি খেতে হবে। শরীরে রক্তের দরকার হলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্ক্রিনিং করে নিতে হবে। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ ব্যবহার করাটাও খুবই জরুরি।
২. কলকারখানার রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
৩. নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।
৪. ব্যবহারকৃত ইনেকশন কিংবা নাক-কান ফোঁড়ানোর সুই ব্যবহার করবেন না।
৫. হেপাটাইটিস এ এবং বি হওয়ার আশংকামুক্ত থাকতে হেপাটাইটিস এ এবং বি এর ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন।
প্রচুর পানি পান করুন ও বিশ্রামে থাকুন, চিকিৎসক যে সমস্ত ঔষধ দিয়েছে তার বাইরে অন্য কোন ঔষধ খাবেন না। এলকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন। হায়বাল জাতীয় ঔষধ খাবেন না।
অনেকেই মনে করেন হারবাল ঔষধ গাছ-গাছড়া থেকে তৈরি হয় বলে এতে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। অনেক সময় দেখা যায়, কবিরাজী চিকিৎসা ও হারবাল জাতীয় ঔষধ খাওয়ার ফলে লিভারে আরো বিরূপ প্রভাব পড়ে। তেল-ভাজা পোড়া ও অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার পরিহার করে চলুন।
একটু খানি সচেতনতাই পারে অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে। তাই আগে থেকেই সচেতন হউন এবং ভালো থাকুন।
এফ.এ.ভি.পি & ইনচার্জ
কুলাউড়া সাংগঠনিক অফিস, ১৩৯
ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কো:লি:
কুলাউরা, মৌলভীবাজার।